নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনে বৈধ নয় ব্যাটারির চার্জে চলা গাড়ি। আইনে কিছু না থাকায় ইলেকট্রিক গাড়িকে নিবন্ধন দেয় না বিআরটিএ। এবার ইলেকট্রিক কার হিসেবে পরিচিত বিদ্যুৎচালিত মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, বাস, ট্রাকসহ ভারী যানবাহনকে বৈধতা দিতে যাচ্ছে সরকার। অবশ্য নতুন আমদানি করা ইলেকট্রিক কার নিবন্ধনের সুযোগ পাবে। তবে পুরনো গাড়ি আমদানি করা যাবে না। লিথিয়াম আয়ন বা তারচেয়ে উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন ব্যাটারি ব্যবহার করতে হবে বিদ্যুৎচালিত গাড়িতে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রচলিত অ্যাসিড ব্যাটারি ব্যবহার করা হবে।
উল্লিখিত বিধান রেখে ‘ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২১’ করেছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত খসড়ার ওপর মতামত দিতে পারবেন যে কেউ। এ নীতিমালা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, রিকশার জন্য নয়। বিদ্যুৎচালিত গাড়ি চলার পথে বড় বাধা পথের মধ্যে ব্যাটারি চার্জ করা। যুক্তরাজ্যের সড়কে তেলের পাম্পের মতো গাড়ি চার্জ করার স্টেশন গড়ে উঠেছে। নীতিমালায় বলা হয়, বাংলাদেশেও একই সুবিধা থাকবে। বিদ্যুৎ বিভাগের গাইডলাইন মেনে সরকারের অনুমতি নিয়ে চার্জিং পয়েন্ট স্থাপন করবে বিদ্যুৎ বিভাগ।
পরিবেশদূষণ ও কার্বন নিঃসরণ রোধে বৈদ্যুতিক গাড়িকে ভবিষ্যতের বাহন বলা হচ্ছে। ‘টেসলা’ নির্মিত গাড়ি বাজারে আসার আগেই বিক্রি হয়ে যায় আগাম বুকিংয়ে। পাশের দেশ ভারতেও চলছে বিদ্যুৎচালিত প্রাইভেট কার, বাস। চীন পেট্রল, ডিজেল, গ্যাসচালিত গাড়ির বদলে ইলেকট্রিক কারকে উৎসাহিত করছে।
২০১৯ সালের ১ নভেম্বর মোটরযান অধ্যাদেশ রহিত করে কার্যকর হয়েছে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’। বিদ্যুৎচালিত গাড়ির নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির প্রধান বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রাব্বানী বলেছেন, আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে খসড়া নীতিমালা করা হয়েছে। নীতিমালা প্রণয়নের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ইলেকট্রিক গাড়ি জীবাশ্ম জ্বালানিতে চলে না। ফলে কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ হয় না। এ ছাড়াও ইলেকট্রিক ইঞ্জিন নয়, মোটরচালিত হওয়ায় নিঃশব্দে চলে। ফলে শব্দদূষণও কমবে।
ইউরোপ, আমেরিকার বাজারে নিত্যনতুন দ্রুতগতির বিদ্যুৎচালিত গাড়ি আসছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, আগামী দশক পর জীবাশ্ম জ্বালানি তেল, গ্যাসচালিত গাড়ি থাকবে না।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে তিন দশমিক চার মিলিয়ন কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাসের অঙ্গীকার করেছে। তাই ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যবহারকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। ইলেকট্রিক কারের সংজ্ঞায় বলা হয়- ব্যাটারিচালিত গাড়ি, যা সাইকেল বা রিকশা নয়। সেই গাড়ি যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ গতিতে চলতে সক্ষম হতে হবে।
খসড়া নীতিমালার চার ধারায় বলা হয়েছে- বিদ্যমান ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের মতো ইলেকট্রিক কার শনাক্তে চেসিস নম্বর থাকতে হবে। সরকারের নির্ধারিত মাপে নির্মাণ করতে হবে। ইঞ্জিন নম্বরের পরিবর্তনে মোটর নম্বর থাকতে হবে। মোটর নষ্ট হলে তা প্রতিস্থাপন করা যাবে। ব্রেকিং, স্টিয়ারিং, লাইটিং, সাসপেনশন বিদ্যমান ইঞ্জিনচালিত গাড়ির সমতুল্য হতে হবে।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে- বিদ্যমান ব্যবস্থার সিলিন্ডারের পরিবর্তে ব্যাটারি সংখ্যা, সিসির পরিবর্তে মোটরের কিলোওয়াট এবং ইঞ্জিনের অক্ষমতার পরিবর্তে ব্যাটারির কিলোওয়াট প্রতি অ্যাম্পায়ার হিসেবে ইলেকট্রিক গাড়ির নিবন্ধন দেওয়া হবে।
নীতমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, ইলেকট্রিক থ্রি হুইলারের আয়ুষ্কাল ১০ বছর, মোটরসাইকেলের আয়ুষ্কাল ১২ বছর এবং হালকা, মধ্যম ও ভারী যানবাহনের আয়ুষ্কাল ২০ বছর হবে। আয়ুষ্কাল শেষ হওয়া গাড়ি চলতে পারবে না। সাত ও আট ধারায় বলা হয়েছে- প্রচলিত ব্যবস্থার মতো রুট পারমিট নিয়ে চলতে হবে যাত্রী ও পণ্যবাহী ইলেকট্রিক কারকে। ভাড়া নির্ধারণ করবে সরকার।
বিএসডি /আইপি